মারা গেছেন হার্ট অ্যাটাকে, ১০ মাস পর কুপিয়ে হত্যা মামলায় বেরোবি শিক্ষক মাহমুদুল হক আটক

মারা গেছেন হার্ট অ্যাটাকে, ১০ মাস পর কুপিয়ে হত্যা মামলায় বেরোবি শিক্ষক মাহমুদুল হক আটক

রংপুর মহানগরীর রাধাকৃষ্ণপুর এলাকার মুদি দোকানদার সমেছ উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছিল হার্ট অ্যাটাকে। কিন্তু মৃত্যুর প্রায় ১০ মাস পর এই ঘটনাকে ‘হত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে দায়ের করা হয়েছে একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ, অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ মিলিয়ে আরও ৫২ জনকে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি মামলায় নাম এসেছে বিএনপি নেতারও।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ২ আগস্ট ২০২৪ সালে রাধাকৃষ্ণপুর এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে আতঙ্কে সমেছ উদ্দিন দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যান এবং পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে এই মৃত্যু ‘হার্ট অ্যাটাক’ হিসেবে চিকিৎসক নিশ্চিত করলেও দীর্ঘ ১০ মাস পর এটি ‘হত্যা’ দাবি করে মামলা দায়ের করা হয় হাজিরহাট মেট্রোপলিটন থানায়।

মামলার বাদী, নিহত সমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম অভিযোগপত্রে দাবি করেছেন—তৎকালীন সরকারের নির্দেশে রংপুরের প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে তার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। অথচ তার স্বামী যে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন, তা স্বীকার করেছেন নিজেই। এ বিষয়ে তার বক্তব্য অনুযায়ী, পুলিশি চাপে তিনি কেবল সই করেছেন, মামলায় কী লেখা আছে—তা জানেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা, সমেছ উদ্দিনের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন, ওই দিন পুলিশ গ্রেফতার করতে এসেছিল স্থানীয় জামায়াত নেতা হাজি নাছির উদ্দিনকে। তাকে আটক করতে গিয়ে এলাকার উত্তেজনায় সমেছ উদ্দিন ভয় পেয়ে পালাতে গেলে রাস্তায় পড়ে যান ও জ্ঞান হারান। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে ঘটনাস্থলে কিংবা মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানায় পরিবার ও স্থানীয়রা।

বিষয়টি ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে আরও একটি বিষয়ের ওপর। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সমেছ উদ্দিন ‘জুলাই আন্দোলনের শহীদ’ এবং তাকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে আর্থিক অনুদান গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ তার পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি—তিনি কখনও কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। বরং তার মৃত্যুর পর তাকে কেন্দ্র করে পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা ও মামলার আসামি হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে নিরীহ মানুষদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেকেই বলেছেন—যে ব্যক্তির মৃত্যুতে চিকিৎসক হার্ট অ্যাটাকের কথা বলেছেন, তার লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছিল। তাহলে এতদিন পর তাকে ‘হত্যা’ বলা ও মামলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে মামলাটি রেকর্ড করেছেন হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহ এবং তিনি নিজেই এর তদন্তের দায়িত্বও নিয়েছেন। তবে মামলার বিষয়ে জানতে থানায় গেলে তিনি মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। এমনকি দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনার পর পুরো রংপুরজুড়ে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছে। নিহত সমেছ উদ্দিনের নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তিমূলক মামলা দায়ের এবং সেই মামলায় জাতীয় নেতাদের যুক্ত করা প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচার নিয়েও।